কবি তালিম হোসেনের জীবনসাধনা : সৃষ্টি ও নির্মাণ
তালিম হোসেন দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সর্র্বশেষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মৃত এবং উচ্চারিত একজন কবির নাম। এই কথাটি আজ আর বিশেষভাবে বলবার দরকার না থাকলেও কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য ও সঙ্গীতের চর্চা এবং গবেষণার জন্য তার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং ঐ মহৎ জাতীয় ঐতিহ্যের রক্ষণ-আন্দোলনের পুরোধা কবি তালিম হোসেনের সকল বাধা অতিক্রমী লক্ষ্য সাধকে পরিচয়টি এই দেশের অনেকেরই অজানা। কবিখ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাদের কাছে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন সংগঠনের স্রষ্টা হিসেবে। তিনি নজরুল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা এটি তার অন্যতর ইতিহাসবিদ্ধ পরিচয়। এদেশে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তার কিছু গান গাওয়া এবং কিছু কবিতার আনুষ্ঠানিক আবৃত্তি শোনার মধ্যে, প্রধানত সমগ্র নজরুল ইসলামকে আমরা প্রথম বেলা কবি তালিম হোসেন প্রতিষ্ঠিত নজরুল একাডেমীর সমগ্রকে সমন্বিত করা কার্যক্রমের দ্বারা— এই একাডেমীর পরিব্যাপ্ত মহা আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
একজন প্রতিভাবানই অণ্য প্রতিভার সার্থক মূল্যায়ন সক্ষম। তালিম হোসেন উপলব্ধি করেছিলেন মানব-সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়া বিশাল ব্যাপ্ত ইউরোপীয় রেনেসা কোনো সংকীর্ণ অর্থে নয়। ঐ রেনেসার বিশ্বায়ত অর্থে মুসলমান সমাজে কেউ তার মেধা ও প্রতিভার দ্বারা সার্থকভাবে প্রবাহিত করে দিয়ে থাকেন, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। সুতরাং নজরুলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির এবং তার সাংস্কৃতিক মূল্যচেতনার সামগ্রিক পরিচিতির জন্য প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আন্দোলন, অনুশীলন ও গবেষণার প্রয়োজন। বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের প্রতিভাই সেই জাগরকাঠি যা নিদ্রিত, নিশ্চল সমাজ মানবকে জাগিয়ে দিতে পারে।
জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই ছিল তালিম হোসেনের সাহিত্যচর্চার অনুষঙ্গ। সে জন্য তার সমগ্র জীবন এই ক্ষেত্রগুলোর চর্চা ও পরিচর্যার ব্যায়িত করে গেছেন প্রায় কিশোর বয়সেই তার পিতা, পিতৃব্য এবং সমবয়সী ভাইদের নিয়ে ‘চাকরাইল রিজওয়ান লাইব্রেরী’ নামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। যে গ্রন্থাগারটি এখনো সংস্কৃতি-চেতন ও পাঠস্পৃহ মানুষের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সমাদ্রিত প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ ভারতের নওগা মহকুমার একটি গ্রামে বহু দুর্লভ গ্রন্থসম্ভারে সমৃদ্ধ পাঠাগার হিসেবে চাকরাই রিজওয়ান লাইব্রেরী অনন্য ও নিরুদাহরণ।
সামন্ত সমাজপতি অথচ সমস্ত হৃদয় জুড়ে সাহিত্যের, প্রধানত কবিতার অনুধ্যান ছিল তালিম হোসেনের পিতা তৈয়ব উদ্দীন চৌধুরীর। সাংসারিক ও বৈষয়িক জীবনে তিনি খুব সফল একজন মানুষ ছিলেন বলা যাবে না কিন্তু নানা সাহসিক, এমন কি রোমাঞ্চকর কাজে এবং বৈচিত্র্যের সন্ধানে ও সেই সঙ্গে সাহিত্যচর্চায় তার আয়ুর সমস্ত সক্ষম সময় জুড়েই ব্যাপৃত ছিলেন। জনাব চৌধুরীও এই অঞ্চলের এক বিরল কর্মোদ্যোগী পুরুষ যার কর্ম ও ভ্রমণবৃত্তান্ত নিয়ে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ’ রচিত হতে পারে।
সত্তর বা আশি বছর আগে আমাদের দেশের গ্রামের সমাজমানস কতখানি আলোকিত ছিল তা আমরা জানি। সঙ্গীত, কবিতা কিংবা সাংস্কৃতির চর্চাকে মনে করা হতো দুর্মতিগ্রস্ত মানুষের কাজ। তালিম হোসেন অন্তত তার জনকের নিকট থেকে কাব্যচর্চার জন্য কোনো বাধা পাননি, বরং পুত্র যে কাব্যপ্রতিভার অধিকারী এটি ছিল তার চিরদিনের গর্বের বিষয়।
প্রতিভাবান সংবেদী তিনি, কবিতা তাকে লিখতে হবে। তাই স্কুলে পর্ব শেষ হবার পরে তালিম হোসেন স্থির করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে গিয়ে পড়বেন। নিশ্চয়ই সেখানে কাব্যচর্চার অনুকূল পরিবেশ তিনি পাবেন তার প্রিয় শিক্ষক রাজশাহী কলেজের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক উমেশচন্দ্র দাশগুপ্তের নিকট থেকে রবীন্দ্রনাথের স্নেহভাজন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের প্রতি একটি সুপারিশপত্র লিখিয়ে নিয়ে যাত্রা করলেন শান্তিনিকেতনের উদ্দেশে। যাবার আগে রাজশাহী থেকে জনকের কাছে তার এই নতুন শিক্ষাযাত্রার কথা জানিয়ে একটি চিঠি এবং সেই চিঠির সঙ্গে দলবৃত্ত ছন্দে ভাগ্যের বিধাতার প্রতি নিবেদিত একটি কবিতা লিখে পাঠিয়ে দিলেন সেই কবিতার প্রথম দুটি পঙক্তি—‘অচিন দেশের একলাপথে তুমিই আমার সঙ্গী
গতিহারা পথিক-পতি বন্ধু দিবস-রাতি।’
কিন্তু কলকাতা পর্যন্ত পৌছেই ঘটল বিড়ম্বনা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হলেন। ঘটনাক্রমে বগুড়ার একজন সহৃদয় মানুষের চোখে পড়ে তার রোগাক্রান্ত অবস্থা। সেই সুজন কোনোভাবে পিতা তৈয়বউদ্দীন চৌধুরীর কাছে তার কলকাতায় অসুস্থ্য’ পুত্রের খবর পৌছিয়ে দেন। খবর পাওয়ামাত্র জনৈক কলকাতায় গিয়ে পীড়িত ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যান। শান্তিনিকেতনে পড়তে যাওয়া তার আর হয়ে ওঠেনি। তালিম হোসেনের ইসকুল-উত্তর লেখাপড়ার কাল বা পুরো কলেজ জীবন আবর্তিত হয়েছে রাজশাহী গভর্নমেন্ট কলেজ প্রিন্সিপালি ইব্রাহিম খা প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল করটিয়া কলেজ এবং কৃষ্ণনগর কলেজে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়াসের ভিতরে। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে তিনি বাংলায় অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তালিম হোসেনের কাব্যচর্চার শুরু তার কলেজ অধ্যায় শুরু হবার অনেক আগে; এবং যখন তিনি ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকেই তার কবিতা, গল্প কলকাতার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করে।
ভাষাকে অধিগত করা, তাকে ব্যবহারের শিল্পময় নৈপুণ্য, স্বকীয় শৈলী, নিরন্তর অধ্যয়ন উন্নত-আধুনিক সংস্কৃতি চেতনা এবং সর্বোপরি কবিত্বশক্তি, দেশের সাহিত্যজগতের সকলেই জানেন, এই দুর্লভ ও বিরল গুণগুলোর সন্নিপাত ঘটেছিল কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকা তালিম হোসেনের মধ্যে। যা আমাদের সাহিত্য ক্ষেত্রের খুব কম কবি-লেখকের মধ্যেই ছিল। কিš‘ তার নিকটজনের এবং যারা তাকে জানেন তাদের জন্য— বিশেষ করে অত্যন্ত পরিতাপজনক এই কথাটি যে, নিজের সৃজনশক্তির প্রতি এক আশ্চর্য ঔদাসীন্য ছিল তার।
কবি আহসান হাবীব, এ দেশের যিনি একজন তারকা কবি, যিনি আজীবন পরম বান্ধব ছিলেন তালিম হোসেনের, একদিন এই নিবন্ধকারকে বলেছিলেন, তালিম হোসেন আপাদমস্তক একজন চবৎভবপঃরড়হরংঃ কবি-হৃদয়ের মানুষ। সেজন্য তিনি লেখেন কম। কবি আহসান হাবীব কথিত এই কারণটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার আত্ম আরেকটি দায়িত্ব নজরুল একাডেমী প্রতিষ্ঠা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্ট সাহিত্য-সম্ভারের রক্ষণ, গবেষণা এবং সামগ্রিক অনুশীলনের জন্য একটি যথাযোগ্য পরিমণ্ডল তৈরি করবার তার বহুদিনের পরিপোষিত ভাবনাকে নিয়ে তিনি যখন নজরুল একাডেমী প্রতিষ্ঠার মহাকর্মযজ্ঞের প্রধান যাতিকের কাজে নামলেন তখন থেকেই তার নিজের সাহিত্যসৃষ্টির কাজ আরো কমে আসতে থাকে। নিজের এই ক্ষতি তিনি মেনে নিয়েছিলেন হযতো এই কথা ভেবে যে, কাজী নজরুল ইসলাম যদি অননুশীলিত থাকেন সেটি সমগ্র জাতির জন্য হবে আরো বড় ক্ষতি।
সাহিত্যসৃষ্টি এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির ও ভিন্ন কর্মোদ্যোগের বিষয়। সাহিত্য সাহিত্য-কর্মীর প্রাতিস্বিক ভাবনার ও নিভৃত সাধনার ফসল। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন ব্যতিহারী হাজারো মানুষ। এই কাজ করবার জন্য তালিম হোসেন তার মেধা একাগ্রতা এবং কর্মশক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করেছেন সেটি যারা দেখেছেন কেবল তারাই তার বিস্ময়কর সংগঠন-নির্মাণশক্তির কথা বলতে পারবেন। দেশের ও বিদেশের পণ্ডিত, সংস্কৃতিবান, উদ্যমী কর্মী— নানা শ্রেণীর ও পেশার সহস্র মানুষকে তিনি বোঝাতে পেরেছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান; তার মনন ও সংস্কৃতিসম্পদের রক্ষণ এবং চর্চার জন্য প্রয়োজন একটি প্রতিষ্ঠান।
একাডেমী প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তার নিজের জন্য কোনো সময় ছিল না। শোচনাগ্রস্ত আমরা মনে করি পাঠকের প্রত্যাশার সামান্য অংশই তিনি পূরণ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই ক্ষতির মূল্য তিনি তার মতো করে শোধ করে গেছেন নজরুলচর্চার জন্য দেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক পাদপীঠ নজরুল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করে।
সাহিত্যের পাঠকদের কাছে তালিম হোসেন মূলত কবি হিসেবে পরিচিত, কিন্তু তার কবিতার বিষয়ে বিশ্লেষণ-ভাষ্যমূলক আলোচনা তেমন একটা হয়নি। আবদুল মান্নান সৈয়দ, দেশের অগ্রগণ্য সাহিত্য সমালোচক, পরিশ্রমী প্রতিভাবান কবি, এই কাজটি তিনি সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারতেন। যিনি কবিতা এবং তার কবিকে গভীরভাবে জাননে ঐ কবির কবিতা সম্বন্ধে প্রকৃত আলোকসম্পাত আলোচনা তিনিই করতে পারেন। কবির ঘনিষ্ঠ অন্তরঙ্গদের বিশেষ করে কবির সহধর্মিণী, যশস্বী কথা সাহিত্যিক মাফরুহা চৌধুরীর ইচ্ছা ছিল এটাই। কিন্তু কেল আমাদের নয়, দেশের সমগ্র সাহিত্যাঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়ে মৃত্যু তাকে নিয়ে গেল।
একদিন— নিশ্চই আমার যোগ্যতার জন্য নয়, আমার প্রতি তার সীমাশূন্য স্নেহের কারণেই তালিম হোসেন আমাকে বললেন, “তুই লেখ না; প্রস্তুতির কথা ভাবিস তো? যে প্রস্তুতি আছে তাতেই হবে। তাছাড়া প্রস্তুতি ব্যাপারটা তো সব সময়ই আপেক্ষিক।”
তিনি ঠিকই বলেছিলেন। আমি লিখব তার কবিতার আলোচনা— তিনি পড়বেন। মনে এতটা সাহস আমার ছিল না। কিন্তু আজ আমি ভাবি কেন তার কথামতো তার যে কোনো একটি কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে অন্তত একটি নিবন্ধ আমি লিখিনি? না হয় তার কবিতার যোগ্য আলোচনা সেটি হতো না, না হয় সেটি হতো অন্ধের হস্তীদর্শন তবু তো তিনি দেখতেন যে তার কথা আমি রেখেছি। আজ যত বড় ও বৈদগ্ধপূর্ণ আলোচনাই লিখি সে লেখা নিয়ে তার কোনো মন্তব্য আমি আর শুনতে পাব না। তিনি যদি একটুও খুশি হতেন সেই মহার্ঘ খুশিও আমার সঞ্চয়ের অতীত রয়ে গেল এই উল্লেখটুকু এখানে রাখতে চাই আমার প্রকাশিত সব লেখাই তার উদার প্রশংসায় ধন্য ও চরিতার্থ হয়েছে। আমি জানি, আমার কাজ করবার অন্য ক্ষেত্র আছে। কিন্তু কবিতার আলোচনা আমার কর্ম নয়। তবু তার ঐ উদার স্নেহের আহ্বান আমাকে ভাবিত করেছিল। কবি নিজে যদি চান আমি লিখি সেক্ষেত্রে সাধ্যাসাধ্যের ভাবনায় বিচলিত না হয়ে উদ্যোগী হওয়া যেতে পারে। তাছাড়া—
‘কে লইবে মোর কার্ড কহে সন্ধ্যারবি—
শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি।
মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল স্বামী,
আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি।’
এই কাব্যকণিকায় ধৃত সংলাপে সকল সাধ্য-সংশয়ীর জন্য এই বার্তা রয়েছে যে, সাধ্য যেটুকুই থাক তাকেই কাজে লাগাতে হবে তার যে কবিতাগুলো আমার প্রিয় সেগুলো নিয়ে মনে হয় পারব একটি নিষ্কর্য লিখে উঠতে। কোনো একটি অবকাশে “আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি।”
এই আমি
আবু তাহের সিদ্দিকী
অতি আদিম এবং নিশ্চিতভাবে পরিচিত পরিমন্ডলে এক মহা সূত্র
“এই আমি”
প্রাত্যহিক জীবনের সাধারণ অস্তিত্বকে যা তারি করে—
আপন অবয়বে।
একটা সীমিত সময়ের বেড়াজালে আবদ্ধ ভীষণভাবে
‘এই আমি’
স্রষ্টা নিয়ন্ত্রিত জাগতিক জীবনে একটা অভ্যাস দ্বারা চালিত
‘এই আমি’
যা সংস্কৃতি অথবা ব্যক্তি ইচ্ছা অনিচ্ছার ধার ধারে না।
এই সত্যটি সংজ্ঞায়িত হয় লিঙ্গের দ্বারা
একটা শারীরিক অভয়বে একটা নামে এবং আভিজাত্যে
কখনো বা বংশ পরিচয়ে অথবা সামাজিক বন্ধন ও সম্পর্কে।
‘এই আমি’
অহংকারটি নিঃশেষিত হয় মৃত্যুতে।
প্রতিদিনকার অস্তিত্বে আমরা “এই আমি”র মুখোশ পরি
অনেকটা আমাদের বায়োডাটা সম্বলিত জীবন বৃত্তান্ত সংকলনের মতো,
আমরা কেউ মানি, কেউ মানি না
ছন্দ পড়া একটা জাগত
শিল্পকলা ছাড়া একটা জীবন
প্রেরণা ছাড়া একটা কর্ম অথবা
পবিত্রতা ছাড়া আরধনা
সংজ্ঞায় উদ্দেশ্যে এবং চিহ্নিত মাপকাঠিতে
আমরা প্রায়ই আটকে যাই দার্শনিক এক উপসংহারে।
একাকীত্বই জীবন, জীবন মানেই আমার মধ্যে আমাকে নিয়ে খেলা করা,
‘এই আমি’
মরচে ধরা সময়ের স্রোতধারায় তলিয়ে যাওয়া আর্তনাদ।।
‘আমরা দু’জন একটি গায়ে থাকি,
সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ।
তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি
তাহার গানে আমার নাচে বুক।
তাহার দু’টি পালন-করা ভেড়া
চড়ে বেড়ায় মোদের বটমূলে,
যদি ভাঙ্গে আমার ক্ষেতের বেড়া
কোলের পরে নিই তাহারে তুলে।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পংক্তিগুলো আমাকে অপূর্ব এক সুখ এবং সহমর্মিতার আনন্দধারায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চাওয়া এবং আমাদের উদ্দেশ্যের সেতারে বাজাতে হবে একই সুরের লহরী।

