চন্দ্রদাহ- পর্ব- ৪

জিল্লু র রহমান শুভ্র

by sondeshbd.com
268 views

সাবিত্রী রিকশা ডাকল। রিকশা চলতে থাকলে সে দেখল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে রাস্তার
উভয় পাশের গাছের ডালপালা ভেঙে রাস্তার উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ঢাকা
মিউনিসিপ্যালিটির কর্মীরা তখনো ভাঙা ডালগুলো সরায়নি কিংবা কোথাও স্তূপ করেনি।
হয়ত ইতোমধ্যে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হতে চলেছিল। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া কাকগুলো
গাছের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক তারে আশ্রয় নিয়েছিল। দুটি মৃত কাক রাস্তায় পড়েছিল। বাসা
হারানোর কারণে পাখিদের ঝাঁক কিচিরমিচির করছিল বা তাদের নিয়তিকে দোষাচ্ছিল।
কয়েকটা খেঁকি কুত্তা যাত্রীশিবিরের নিচে নির্ভয়ে হাই তুলছিল যেন তারা এটি সরকারের
কাছ থেকে লিজ নিয়েছে। যাই হোক, প্রতি বছরের সেই চিরচেনা দৃশ্যগুলো তার গা
সওয়া ছিল বলে তার মধ্যে বিস্ময়সূচকের প্রাদুর্ভাব ঘটল না।

রিকশা রাস্তায় পড়ে থাকা ঝরাপাতার স্তূপের উপর দিয়ে এগিয়ে চলল।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রিকশা পলাশী চত্ত্বরে পৌঁছুল। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া
মিটিয়ে ফেলল সে। চারদিক ইতস্তত তাকিয়ে তার মনে হলো আবহাওয়া বেশ উত্তপ্ত।
বঙ্গবন্ধু’র অনুকূলে এবং পশ্চিম পাকিস্তান শাসকদের বিরুদ্ধে খণ্ড মিছিল। কোথাও
দেয়ালের সাথে পোস্টার সাঁটানো। ‘জয়বাংলা’, ‘স্বাধীনতা’, ‘ফিরে যাও পাকি’ ইত্যাদি
স্লোগান। তাছাড়া জনরোষ উদ্দীপ্ত করে এমন সব গ্র্যাফিতি।

তাকে দেখে তার পরিচিত একজন, বঙ্গবন্ধু’র ভাষণে অবশই উদ্দীপ্ত, ভিড় ঠেলে
এগিয়ে এল। তাকে খুব বিনয়ী, হালকা, মেয়েলি এবং টাকুযুক্ত মনে হচ্ছিল। সে তার
চোখে একটি lorgnette পরেছিল এবং হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “হঠাৎ করে গ্রামে ফিরে
গিয়ে নিজেকে জীবন্ত কবর দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন প্রাণের শহর ঢাকায় ফিরে এসে
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পর সত্যিই আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। কী চমৎকার
এবং দুঃসাহসিক ভাষণ! পুরো বাঙালি জাতিকে এই ভাষণ উজ্জীবিত করবে। তাঁর ভাষণে
স্পষ্ট যে আমরা বাঙালিরা প্রতারিত হয়েছি। তবে খুব শিগগিরই আমরা ঘুরে দাঁড়াব!
মনে করি বঙ্গবন্ধু অবশ্যই ক্ষমতায় আরোহন করবেন। পাকিস্তানি শাসকরা যতই গড়িমসি
করুক না কেন!”

কিছুক্ষণ পরে, এক ফক্কড় সেখানে ঢুকে পড়ল। সিগারেট ফুঁকছিল সে, পুটকিটা
ফেলে দিয়ে, কপটতার সহিত বলল, “তুমি একজন সুন্দরী যুবতী। আজকের দিনটা
তোমার।”

সাবিত্রী ভাবল, ফালতু সমস্যায় জড়িয়ে যেতে পারে সে। ভাবতে না ভাবতে হঠাৎ
করে তার দিকে এক বিশাল পাথর গড়িয়ে গড়িয়ে এল। সামান্য’র জন্য রক্ষা পেলেও
শিউরে উঠল সে। এটি ছিল তার কাছে ভয়ের এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। বিপদের
আলামত টের পেয়ে সে আর দেরি করল না, তড়িঘড়ি স্থান ত্যাগ করল এবং হলের দিকে
হাঁটতে লাগল। শেষাবধি কোনো ঝামেলা ছাড়াই ইকবাল হলের ২৬৯ নম্বর কক্ষের
সামনে চলে এল। ততক্ষণে রাসেল ঘরটি তালাবদ্ধ করে বাইরে গিয়েছে। হতাশা তার
মনে উঁকি দিল বটে, দমাতে পারল না। দোতলা থেকে নিচে নামছিল ঠোঁট কামড়াতে
কামড়াতে, সিঁড়ি’র গোড়ায় রাসেলের রুমমেটের সঙ্গে তার মুখোমুখি দেখা। ছেলেটি ছিল
দীর্ঘকায় এবং উইলো গাছের মতো তার ত্বকের রং। ক্যাজুয়াল ড্রেসে ছিল—ট্রাউজার,
গেঞ্জি ও চপ্পল পরা। লিফলেট বহন করছিল সে। সাবিত্রীকে ফিরে যেতে দেখে, বলল
সে, “রাসেল নেই, তাই না? আর পাবেনই বা কীভাবে?। তার এখন উড়ু-উড়ু মন।”
“উড়ু-উড়ু মন, বুঝলাম না।”

“ঘাবড়াবেন না। দূরে কোথাও উড়ে যায়নি। আছে আশপাশ। টিএসসিতে খুঁজতে
পারেন। সুশীল প্রেমের চন্দ্রযান ওখানেই ল্যান্ড করে।”
সাবিত্রী যেতে উদ্যত হয়ে আবার তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা
করল, “ঘুম থেকে কখন উঠেছে বলতে পারেন?”

“গতরাতে আমি একটা স্ট্যাগ পার্টিতে ছিলাম। ফিরতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। কখন
ঘুম থেকে উঠেছে ঠিক বলতে পারছি না। তবে একবার দেখেছি বিড়বিড় করে কাউকে
স্মরণ করছিল।” এই কথা বলে সাবিত্রীকে আরো ফাঁপরে ফেলল।
মেয়েদের মন সন্দেহপ্রবণ। ফাঁপর কাটিয়ে উঠতে বোকার মতো বলে ফেলল,
“কাকে স্মরণ করছিল বলতে পারেন?”

মনে হচ্ছিল ছেলেটি শশক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তার গোলগাল চেহারার আড়ালে
লুকিয়ে ছিল বুদ্ধিমত্তা ও সারল্য। বলল সে, “একমাত্র অন্তর্যামী বলতে পারবেন। কারণ,
আমরা যা দেখতে পাইনা তিনি তা পান, যা শুনতে পাইনা তিনি তা পান।” পরক্ষণে
সংযোজন, “কারো জন্য সময় লেজ গুটানো কুকুরের মতো দরজায় বসে থাকে না।”
“তা ঠিক, তবে আমি পারিনি সময়কে ধরতে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
সাবিত্রী তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে টিএসসি’র দিকে হাঁটতে লাগল। শুরুটা ভালো
না হলে মনটা যেমন বিক্ষিপ্ত হয়, ঠিক সেরকম ভাবে।

সেখানেও তার দেখা মিলল না। ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবল কিছুক্ষণ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি
কী ঘোলাটে হয়ে উঠছে? পলাশীর খণ্ড চিত্র এবং সেখানে তার পায়ের কাছে গড়িয়ে আসা
বিশাল পাথর খণ্ডটি কীসের আলামত বহন করছিল? নীরবতাই যখন উত্তর তখন সেখানে
দাঁড়িয়ে থেকে লাভ কী?
কোথায় যাবে তা মনস্থির করতে না পেরে বিক্ষিপ্ত মনে মধুর ক্যান্টিনের দিকে
রওয়ানা দিল।

অন্যান্য দিনের তুলনায় তুলনামূলক কম স্টুডেন্ট সেখানে বসে ছিল এবং সেখানকার
পরিবেশও তার স্বস্তিকর মনে হচ্ছিল না। কিন্তু কী আর করা! একটি চেয়ার টেনে নিল
অনাগ্রহভরে এবং সেখানে বসেই মাছির দৃষ্টিতে রাসেলকে খুঁজছিল সে। দশ-বারো
বছরের এক পোড়া তামাটে রঙের ক্লিনার টেবিল সাফ করছিল; কাউকে আশপাশ না
দেখে তাকেই লক্ষ করে দুর্বল কণ্ঠে এককাপ চা অর্ডার করল সে। কিছুক্ষণ পর তার
সুপরিচিত ওয়েটার ক্লিনারের পরিবর্তে চা দিয়ে গেল। চায়ে চুমুক দিল গ্রামের মানুষের
মতো সুড়ৎ সুড়ৎ শব্দ করে; এবং কী করবে তা নিয়েও ভাবতে লাগল সে। হঠাৎ রবার্ট
ফ্রস্টের লেখা ‘Stopping by Woods on a Snowy Evening’ কবিতার শেষ স্তবক মনে
পড়ল তার—

‘The woods are lovely, dark, and deep,

But I have promises to keep,

And miles to go before I sleep,

And miles to go before I sleep.’

ঠিক তখুনি তার চোখের উপর পুরুষীয় হাতের উত্তেজনাপূর্ণ অস্তিত্ব অনুভব করল সে।
পেছন থেকে, কেউ একজন তার চোখ চেপে ধরে রেখেছে। চোখের আলোয় কাউকে
দেখতে পাচ্ছিল না ঠিক, তবে মনের আলোয় (এই আলো পৃথিবীর আলোর চাইতে
অনেক অনেক দ্রুতগামী) দেখতে পাচ্ছিল সে।

“আকাশের হাতে অনেক নীলপদ্ম। কয়েকটা এনে দেবে?” বিড়বিড় করল সে।
পরক্ষণে তার গলার স্বর ঠুমরির মতো বেজে উঠল, “জানো তো নীলপদ্ম আমার খু-উ-ব
পছন্দ।”

কায়দা করে রাসেলকে কথা বলাতে সে যে বাধ্য করছিল রাসেল তা টেরই পেল
না। টুপ করে বলে উঠল সে, “দুঃখিত! জানতাম না তো।” বাগাড়ম্বর না করে সাবিত্রী’র
চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে এবার তার সামনে এসে বসল এবং অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা
করল, “আশ্চর্য়! কীভাবে বুঝতে পারলে আমিই রাসেল? অন্য কেউ তো হতে পারত।”
সাবিত্রী বলল আত্মবিশ্বাসের সাথে, “ইংরেজিতে ‘intuition বলে একটা শব্দ আছে
যার অর্থ অন্তর্জ্ঞানের মাধ্যমে কাউকে অনুভব করা।”

“তুমি কি আমাকে অনুভব করছিলে? মাইরি বলো!” রাসেলের তর সইছিল না।
সাবিত্রী হাসল শুধু—উত্তর দিল না। তবে তার চোখে ভাসছিল সবুজ নক্ষত্র।
রাসেল ততটা অর্বাচীন নয়, উত্তরটা পেয়ে গেল সে। হৃষ্টচিত্তে তার নিজের জন্য
এককাপ চা অর্ডার করল এবং সাবিত্রী’র দিকে তাকিয়ে এবার বলল, “তোমাকে আবার
দেখার এক মায়াবী মুহূর্ত।”

“কেন মায়াবী মুহূর্ত?” জিজ্ঞাসা করল সাবিত্রী, কিছুটা অবাক হয়ে।
“আমার ভালো লাগছিল না,” জবাব দিল সে, কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে।
“মানুষের মন পরিবর্তনশীল তা জানি। শীতে এক রকম, গ্রীষ্মে আরেক রকম,
সকালে এক রকম বিকেলে আরেক রকম। কিন্তু তোমার কারণ কী?” বলার পর রাসেলের
দিকে তাকিয়ে রইল সে।

“একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে,” রাসেল বলল, চেয়ারে হেলান দিয়ে।
“আমি জানি,” বলল সে, তার ঠোঁটে একটি মায়াময় হাসির দ্যুতি ঝিলিক দিল।
“জানো? সেটা কী?” রাসেল আবার সোজা হয়ে বসল এবং অবাক হওয়ার ভান
করল।
“তা হলো সাবিত্রী,” বলল সে। পরক্ষণে, তির্যক চোখে জিজ্ঞাসা করল, “ঠিক
আছে?”
“মোটেও তা নয়।” রাসেল রহস্যময় হয়ে উঠল।
“তো?” সে তার মেজাজ হারিয়ে ফেলল।
রাসেল সাবিত্রী’র চোখের দিকে তাকিয়ে রহস্যজনকভাবে হাসল, তারপর পকেট
থেকে একটা চিঠি বের করে তার হাতে দিল। এটি ছিল তার মায়ের অসুন্দর হস্তাক্ষরে
লেখা শব্দালঙ্কারে ভারী চিঠি। কেবলই সে পোস্টম্যানের কাছ থেকে পেয়েছে।
সাবিত্রী খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করল।

আমার প্রিয় বাছাধন,
তুমি কেমন আছ? মায়ের কথা মনে পড়ে? হতে পারে, মনে পড়ে অথবা না-ও
মনে পড়তে পারে। একজন মা, সে যেখানেই থাকুক না কেন, তার ছেলেকে
ভুলতে পারে না। কেবলমাত্র মানুষের মা-ই নয়; প্রিয় পুত্র, এমনকি একটি
তুচ্ছ পাখির মা-ও তা ভুলে থাকতে পারে না। একজন মা সর্বদাই মা। এই
কারণেই কোনো মা পাখি যখন খাবারের খোঁজে বাসা থেকে বেরোতে চায়,
তার আগে বাচ্চাদের আদর করে। এবং যত দূরেই যাক না কেন, সময়মতো
তাদের খাবার বহন করে নিয়ে আবার ফিরে আসে। কারণ, তার বাচ্চাদের
ভুলে যায় না।

এই পৃথিবীতে চূড়ান্ত সুখের অপূর্ববিদিত দৃশ্যটি হলো যখন মা পাখি তার
বাচ্চাগুলোকে খাওয়াতে সক্ষম হয়। একেই বলে মা এবং আমি একজন মা।
আজ থেকে প্রায় বাইশ বছর আগে, তুমি যখন আমার কোল আলোকিত
করেছিলে, তখন সময়টি ছিল সোনালি প্রভাতের। সকালের আজান দূরের
মসজিদ থেকে ভেসে আসছিল এবং বাতাসে ছিল অদ্ভুত শিহরণ। আর মা
হওয়ার এক স্বর্গীয় সুখ আমাকে আচ্ছন্ন করছিল বিভোরভাবে।

দুর্ভাগ্যক্রমে, আমার স্তন তোমাকে স্তন খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিল না।
আমার কী দুশ্চিন্তা তখন! সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র অশেষ রহমতে আমার স্তন
ধীরে ধীরে দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল। দিন দিন তুমি একটু একটু
করে বড় হচ্ছিলে। তোমার হাহাকার, তোমার পবিত্র হাসি, তোমার অস্থিরতা,
ঘুমঘোরে তোমার হাসি-কান্না, যখন তুমি দোলনায় স্বর্গদূতদের সাথে খেলতে,
স্কুলব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে, তারপর কলেজ, দীর্ঘ জার্নি’র পর
অবশেষে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়—সমস্তস্মৃতি আমার হৃদয়ে তাজা ফুলের মতো
গেঁথে আছে। আমি কীভাবে তোমাকে ভুলে থাকতে পারি, প্রিয় পুত্র? আজ
রাতে অনেকটা লিখলাম এক বৈঠকে। তবুও আমি লিখছি। জানিনা কেন
এমন হচ্ছে? এখন তুমি আমার এবং আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে; সম্ভবত
এজন্যই। হয়তবা, ঘরের পরিবেশ আমাকে লিখতে বাধ্য করছে।

তোমার বাবা বিছানায় শান্তভাবে ঘুমাচ্ছেন। জানালা দিয়ে ঝিরঝির
বাতাস ঘরে ঢুকছে এবং বাগান থেকে ফুলের গন্ধ। এখানে এখনও এক অদ্ভুত
নীরবতা রয়েছে। যার আবেগ আছে, আবেগ মন্থনের শক্তি এবং কিছু তৈরি
করার মরিয়া বাসনা, চিন্তার সাগরে ভাসবে সে, এটাই স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই
জানো, তোমার বাবার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে আমি কবিতা লিখতাম।
আমার লেখার হাত খারাপ ছিল না। সেই কবিতাগুলো দেয়াল পত্রিকায় ছাপা
হয়েছিল। শিক্ষক এবং অভিভাবকরা উদার চিত্তে প্রশংসা করেছিলেন। প্রচুর
কবিতা এখনও আমার সাথে আছে। সেগুলো আলমারিতে লুকিয়ে রেখেছি।
লজ্জায়, সে-সমস্ত কবিতার একটিও তোমাকে দেখাইনি। খুব সাধারণ এবং
ছড়া কবিতা। বর্তমান যুগে এগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অচল। তুমি যদি কখনো
দেখতে চাও, দেখাব।

তুমি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা
করছ যা আমাকে গর্বিত করে। তবে তোমার বাবার মতো আমিও একটু
চিন্তিত। তিনি নিয়মিত বিবিসি বাংলা শোনেন। রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে
খারাপ খবর শুনে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। শুনছি, বঙ্গবন্ধুস্বাধীনতার
ডাক দিয়েছেন। যে-কারণে ঢাকার আবহাওয়া দিনদিন উত্তপ্ত হচ্ছে। এটা
সঠিক না ভূয়া খবর ঠিক জানিনা। যদি সঠিক হয় তবে তোমাকে অবশ্যই
সাবধান থাকতে হবে। আমি জানি তুমি বঙ্গবন্ধুকে অনেক বেশি ভালোবাসো,
আমিও বাসি। তবে মনে রাখবে তুমি আমাদের একমাত্র পুত্র। আমরা অবশ্যই
পাকিস্তানি শাসকদের ঘৃণা করি এবং তাদের থেকে পৃথক হতে চাই, তবে
তোমাকেও হারাতে চাই না। তুমি যদি কোনো সমস্যায় পড়ো, চিন্তা না করে
তখুনি বাড়িতে চলে আসবে। এই বাড়ি, সম্পত্তি, অস্থাবর এবং স্থাবর যা
আছে সব তোমার জন্য। এই গ্রামে তোমার বাবার একটা সম্মান আছে।
আশা করি তুমি সেই সম্মান রক্ষা করতে পারবে। এছাড়া, আমাদের গ্রামে
একটি বড় গ্রন্থাগার স্থাপনের সুপ্ত বাসনা দীর্ঘদিনের। স্থানীয় ও বিদেশি বইয়ে
গ্রন্থাগারটি পূরণ করা হবে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি
জ্ঞান অনুশীলন করতে পারবে। তোমার বাবাও খুশি হবেন। আমরা যদি
আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করতে চাই তবে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই।
আমার জানামতে, সংক্ষিপ্ততা হলো সমস্ত কিছুর প্রাণ; তবে আমি সীমা
ছাড়িয়ে গেছি। যাই হোক, আমি আসল কথা বলতে ভুলে গেছি। ভালো কথা,
আমি তার নামটি মনে করতে পারছি না। ওহ, হ্যাঁ, মনে পড়েছে, তার নাম
সাবিত্রী। খুব মিষ্টি মেয়ে, তাই না? কেমন আছে সে? এবার তুমি তার পরিবার
সম্পর্কে লিখবে। যদি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গ্রামে আসা সম্ভব হয়, যথাসাধ্য
চেষ্টা করবে। তাকে নিয়ে গ্রামে আসা কষ্টসাধ্যও নয়।

আমি তাকে দেখতে চাই, যদিও সে একজন হিন্দু মেয়ে। আমার পক্ষ
থেকে কোনো সমস্যা নেই। তোমার বাবাও প্রতিক্রিয়া জানাবেন না; কারণ,
তিনি শান্ত এবং মোহমুক্ত মানুষ। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক চেতনাবোধে
তাড়িত একজন মানুষ। সাবিত্রী’র জন্য আমার হৃদয়তল থেকে আলিঙ্গন এবং
উষ্ণ চুম্বন পাঠাচ্ছি। আজ আর নয়, শুভ কামনা, আমার বাছাধন! আমার
চোখের মণি! আমার কলিজার টুকরো!
ইতি
ভবদীয় মা
বর্ণনাবহ চিঠিটি পড়ার পরে সাবিত্রী তার দম কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখল, তারপর দম
ছাড়ল। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল সে, “বাহ! আমি নির্বাক! কী জিনিয়াস মা!” চিঠিতে
চুম্বন করল সে এবং দুর্দান্ত প্রশংসা করতে একদম কার্পণ্য করল না। “সন্দেহ নেই,
তিনি একজন অসাধারণ মা, মায়েদের মা, আড়ালে থাকা একজন নামহীন কবি এবং
অন্ধকারের উজ্জ্বল প্রদীপ। মনে করি তিনি ভাবনামুক্ত ধরনের মহিলা এবং গুণ ও কৃতিত্বে
শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসীদের ছাড়িয়ে গেছেন। আমি তার সাথে দেখা করতে চাই।”
“অবশ্যই, একদিন দেখা করবে,” রাসেল বলল, আশ্বাসের সুরে।
“সেই একদিন কবে আসবে, কখন আসবে, জানি না,” বলল সে, হতাশ কণ্ঠে।
“মা বলত,” রাসেল থেমে গেল, এবং তারপর ঘাড় চুলকাতে লাগল রহস্যজনক
ভঙ্গিতে।
“থামলে কেন? বলো, কী বলত?” জিজ্ঞাসা করল সে খুব আগ্রহ নিয়ে।
“বলত,” রাসেল আবার থামল, হয়ত ইচ্ছে করেই। যার সামনে কথা বলছিল তার
শোনার আগ্রহ কতটুকু হয়ত তা দেখার জন্য।
শোনার আগ্রহটা ঝাপটা বাতাসের মতো সাবিত্রীকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। তার আর তর
সইছিল না। শুদ্ধ ব্যাকরণে যাকে বলে ‘বড্ড অস্থির’ সে-রকম অস্থির হয়ে উঠল সে।
রাসেলকে ধাক্কা দিয়ে, বলল সে, “আবার থামলে কেন? তোমার কি থামা’র রোগ আছে
নাকি?”
“আরে না! কী সব পাগলামি কথাবার্তা?” রাসেল বলল, “বলতে চাইছিলাম না।
তুমি যখন ছাড়ছোই না, বলে ফেলি। মা বলত, একদিন আমাদের বাড়িতে সুন্দরী বউ
আসবে।”
“সুন্দরী বলতে কী বোঝাচ্ছ? সাবান দিয়ে ধোওয়া ফর্সা মুখ?” খোঁচা দিল সে।
“ভয় পাচ্ছ কেন? তুমিও তো ফর্সা। আমাদের দেশের কালচার ছেলে কুৎসিত হোক,
সমস্যা নেই। ছেলেবউকে হতে হবে ধবধবে ফর্সা।”
“ফর্সা না হলে কী এড়িয়ে চলতে?”
“ঠিক জানি না!” রাসেল বলল, দাম্ভিক জন বুলের মতো কাঁধ ঝাঁকিয়ে।
পাশ্চাত্যে যা স্টাইল এখানে তা বেমানান। তার কথা বলার ধরণটি পাশ্চাত্য
স্টাইলের, যেখানে “বিনয়” খুব অসহায় ছিল। সাবিত্রী ১৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরে দাঁড়াল।
ওই প্রসঙ্গে আর না গিয়ে গভীর জলের মতো শীতল ও স্থির ভাব প্রদর্শন করল। রাসেলকে
বোঝার সুযোগ না দিয়ে, গাম্ভীর্যকে পুরোপুরি দখলে নিয়ে, বলল সে, “চলো! বাইরে
যাই।”
তারা রাস্তায় নামল।
রাস্তা বন্ধ করে জনসভা চলছিল। আইন ভঙ্গকারী জনতা, তালকানা পথচারী, যত্রতত্র ঘুরে
বেড়ানো লোকজন, হাঁপিয়ে ওঠা রিকশাচালক ও কৌতূহলী মানুষে ঠাসা ছিল জনসভা।
তাদের মধ্যে একজন—যিনি ছিলেন শালপ্রাংশু এবং ঘন গোঁফের অধিকারী, খুব সংক্ষিপ্ত
বক্তব্য দিচ্ছিলেন; কিন্তু উত্তেজক। তার বক্তৃতা জনসভা আন্দোলিত করছিল। তার বক্তব্য
পুলিশ বাহিনীর কাছে আপত্তিকর মনে হচ্ছিল। তারা ভাবল তার সহিংস বক্তৃতা সমবেত
কলহপ্রিয় এবং যথেচ্ছাচারী মানুষকে প্ররোচিত করছে। ফলে, সহিংসতা এবং হাঙ্গামা
জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হঠাৎ তারা অসহিষ্ণু হয়ে উঠল। জনসভাকে ভণ্ডুল
করার জন্য জনসভার মধ্যে কাঁদানি গ্যাস ছুঁড়ল। জনসভা গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হলো।
তাদের চোখে পোড়ার যন্ত্রণা উপচে পড়ছিল। অতএব, জনতা ছত্রভঙ্গ হতে বাধ্য হলো।
রাসেল এবং সাবিত্রী দৌড়ে পালাচ্ছিল, দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা একটি rickety building এর সামনে

পুলিশের সম্মুখীন হলো। এক কালাপাহাড় কাপাস হাসি দিয়ে বলল, “কোথায়
পালাচ্ছিস? বোথ অব ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।”
তাদেরকে যখন গরাদের ভেতর ঠেলে দেওয়া হলো, তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই
হতাশা কোত্থেকে ছুটে এসে সাবিত্রীকে চেপে ধরল। ঠোঁট কামড়াচ্ছিল সে, হঠাৎ তাকে
বিস্মিত করে রাসেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশাত্মবোধক গান ‘আমার সোনার বাংলা’
বেসুরো গলায় গাইতে শুরু করল।
গরাদের সামনে ডিউটিরত পুলিশ গানটি শোনামাত্র তার ব্রহ্মতালু ধাঁ করে জ্বলে
উঠল। অভিযোগ জানাতে দৌড়ে এলেন দারোগা বাবুর সামনে।
দারোগা বাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে আরামসে meerschaum pipe -এ ধূমপান
করছিলেন। তাকে দেখামাত্র ঠোঁট থেকে পাইপ সরিয়ে রূষ্ট স্বরে বললেন, “কী হয়েছে?
তোমার পাছায় ওরা কি আঙুল দিয়েছে?”
“তওবা তওবা! তা হবে কেন?”
“তাহলে?”
“স্যার, ওই ছেলেটি বড় বদমাশ। সে এক হিন্দু কবির গান গাইছিল। আমাদের
সম্মান মরা ব্যাঙের মতো চিৎপটাং। আল্লামা ইকবাল আমাদের মহান কবি। তার কবিতা
আবৃত্তি করছিল না সে। কী লজ্জা! সে শাস্তির দাবিদার। কমপক্ষে দশ ঘা চাবুক,” বকবক
করল সে।
“তুমি কি সেই কবির নাম বলতে পারবে?” জিজ্ঞাসা করলেন তিনি, আড়ষ্ট ভঙ্গিতে।
“কী যেন নাম! হ্যাঁ, মনে পড়েছে, রডিন্দ্রনাথ ঠাকুর। কপট, মহান ভণ্ড এবং
চৌর্যবৃত্তির হোতা! আমাদের আল্লামা ইকবালের পায়ের নখের যোগ্য নন।” খুব মজা করে
বিষোদগার করল সে। তারপর সে যোগ করল, “আমি শুনেছি তিনি আমাদের মহান কবি
ইকবালকে কপি করে বিভিন্ন ধরনের কবিতা লিখতেন।”
উর্দুভাষী দারোগা বাবু মনে মনে হাসলেন এবং ভাবলেন তার অধস্তন পাকিস্তানের
যোগ্য উত্তরাধিকার। তবে তিনি নিজের আগ্রহ থেকেই কবির নাম সংশোধন করে
দিলেন। বললেন, “তার নাম রডিন্দ্রনাথ নয়—সঠিক নাম রবীন্দ্রনাথ। তবে অবশ্যই
তিনি আমাদের মহান কবি ইকবালের চেয়ে ভালো নন। আমি তর্ক না করে কিছু কিছু
ক্ষেত্রে তোমার সাথে একমত। তোমার অবশ্যই জানা উচিত, বাজারে গুজব রয়েছে তিনি
প্রাক্তন ব্রিটিশ শাসক এবং বুদ্ধিজীবীদের তেল মেরে ‘নোবেল পুরস্কার’ বাগিয়ে নিয়েছেন।
ব্রিটিশরাই তার নাম ‘নোবেল কমিটির’ কাছে সুপারিশ করেছিল।”
পুলিশ সদস্য হা হা করে হাসল, “স্যার, আমি তার সঠিক নাম জানতাম। তিনি
মুসলমান নন বলে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তার নাম বিকৃত করেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি
কাফের। যদিও মুসলমানদের মতো তার মুখে ঘন দাড়ি ছিল, তবুও তাকে ঘৃণা করি।”
“কে করে না? কেউ ভাবেন না তিনি একজন চমৎকার মানুষ।” দারোগা বাবু
অনুযোগের সুরে বললেন, “এছাড়া, তিনি দুশ্চরিত্রাদের প্রেমে পড়তেন।”
“তাই?” পুলিশ সদস্য হতবাক হওয়ার ভান করল, “খুব খারাপ! এটা খুব খারাপ!
একথা শুনে আমি তো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এজন্যই তো বলে,

when money is lost

something is lost, when character is lost everything is lost. Ó

কেবল তা-ই নয়, তিনি পবিত্র কুরআন ও আমাদের নবি সম্পর্কে কিছুই লেখেননি,”
দারোগা বাবু বললেন, বোকামি করে। (বেশিরভাগ মুসলিম এখনো চিন্তা করেন পবিত্র
কুরআন ও নবি সম্পর্কে যিনি লেখেন না, তিনি সত্যিকারের লেখক নন।)
“এটা খুব খারাপ! খুব খারাপ!” পুলিশ সদস্য তার বসকে অন্ধভাবে সমর্থন করল।
তারপর বসের দিকে তাকিয়ে বলল সে, “স্যার, গান গাওয়ার অপরাধে বেয়াদপটাকে
পাকিস্তানি কায়দায় একটু মেরামত করি?”
তার উপর দিয়ে কথা বলায় দারোগা বাবু ক্রুদ্ধচোখে তাকালেন তার দিকে।
পুলিশ সদস্য চলে যাওয়ার পর তিনি তার হ্যাট খুলে টেবিলে রাখলেন এবং তারপর snuggery –

তে গেলেন বিশ্রামের জন্য। তেল চিটচিটে সিঙ্গেল খাট। এঁস নড়ড়ঃ
পরিহিত পা দুটো মেঝেয় রেখে পোশাক না খুলে উত্তমাঙ্গ বিছানায় এলিয়ে দিলেন এবং
আরাম করে দুই হাত দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়লেন। টের পেলেন না কখন
বিকেল গোধূলির পথ মাড়িয়ে সন্ধ্যার আড্ডায় উপস্থিত হয়েছে। কোত্থেকে একটা ঃঁননু
বেড়াল এসে আচমকা তার ঘুম ভাঙিয়ে দিল। পা তো মেঝেয় ছিল, শুধু উত্তমাঙ্গটা সোজা
করলেন। ঘুম ভাঙানোর কারণে বেড়ালের উপর রাগলেন না, বরং খুশিই হলেন, “তুই
আমার বউয়ের মতোই কাজ করেছিস। একাধিক কারণে বউ আমার কাছে প্রিয়। একমাত্র
সে-ই জানে কখন আমাকে বিছানা থেকে উঠতে হবে এবং আমার দায়িত্বটা কী?”
বেড়ালটি সম্ভবত কানে খাটো। তার প্রশংসা আমলে নিল না, বরং সে কোনো
পাকিস্তানির মুখ দেখতে চায় না এরকম ভাব করে দ্রুত কেটে পড়ল। তার বিরক্তিকর
গতিবিধিতে মুচকি হাসলেন তিনি এবং তারপর চেম্বারে ফিরে এলেন।
চেয়ারে বসার আগে টেবিল থেকে হ্যাটটি লুফিয়ে নিলেন। তারপর কব্জি-ঘড়ি দেখে
অধস্তনকে ঝরঝরে গলায় ডাকলেন।
“ইয়েস স্যার,” সাড়া দিল সে।
চায়ের তেষ্টা পেয়েছিল তার। এককাপ চা অর্ডার করলেন। একটু পরে, টিবয় তাকে
চা দিয়ে গেল। তিনি চা পান করতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিট পর, চা খেতে খেতে,
তিনি সেই পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কবুতর-দম্পতি কোথায়? তাদেরকে
ছেড়ে দিয়েছ?”
“স্যার, আপনার হুকুম ছ্ড়াা গাছের পাতাও নড়ে না। আমি কীভাবে ছাড়ব? আমার
ঘাড়ে কী দুটো মাথা?” ইনিয়ে-বিনিয়ে বলল সে।
“তাদেরকে এখানে হাজির করাও,” দারোগা বাবু নির্দেশ দিলেন, “তাদের সাথে
কথা বলি। দায়িত্ব বলে তো কিছু একটা আছে, নাকি?”
নির্দেশ পাওয়া মাত্র পুলিশ সদস্য গিয়ে গরাদের তালা খুলল এবং তাদেরকে লক্ষ
করে বলল, “স্যার, আপনাদের ডাকছেন।”
“আমরা ক্ষুৎপিপাসায় মরে যাচ্ছি। এখন, এই সন্ধ্যায়, আপনার স্যার আমাদের
ডাকছেন! কতটা বাজে মানুষ তিনি!” রাসেল ভীষণ রেগে গেল।
পুলিশ সদস্য ছিল কৌতুক অভিনেতা ধরনের। কৌতুক মিশিয়ে কথা বলতে পছন্দ
করে। বলল সে, “দেখুন, আমাদের স্যার ঘুষ খান না। তার ফাদার তেজারতির ব্যবসাও
করেন না। মানি সাপ্লাই কম। তাই তিনি গাঁটের পয়সা খরচ করে কাউকে খাওয়ান না।”
পরক্ষণে, ইতস্তত করে আবার বলল সে, “জামাই ঘুষ খান না বলে শ্বশুরমশাই মুখ কালো
করে থাকেন। কী আশ্চর্য!”
“আপনি কি তার শ্বশুরমশাইকে চেনেন?” হঠাৎ রাসেলের মুখ থেকে প্রশ্নবাণটা
বেরিয়ে গেল, অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
“চিনি বৈ কি! তিনি একবার এখানে এসেছিলেন,” বলল সে, কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে,
“তবে থানায় ঢোকেননি। কারণ ওই একটাই জামাই ঘুষ খান না। কী আশ্চর্য! তিনি পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। শুনেছি, সামনের বছর হজ্বে যাওয়ার জন্য বসের কাছে মানিও
ধার চেয়েছেন।”
তারা শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ঢলতে ঢলতে দারোগার সামনে এসে
দাঁড়াল, তবে মাথা উঁচু করে।
দারোগা বাবু ভাবনার মুডে ছিলেন। তাদের দেখামাত্র তিনি ভারী কণ্ঠে বললেন,
“প্লিজ, সিট ডাউন!”
তারা বসল না। দাঁড়িয়েই রইল। দারোগা বাবুকে অগ্রাহ্য করার অ্যাটিচুড তাদের
মধ্যে। দারোগা বাবুর সঙ্গে মনোনিবেশ করার আগে তারা সারা ঘর পর্যবেক্ষণ করল।
জানালার উপর চোখে পড়ল একটি বড়সড় ধুলি-ধূসরিত ফুলের টব। যত্নের অভাবে
ফুলগাছটি শুকিয়ে যাচ্ছিল প্রায়।
চা পানের পর দারোগা বাবুর মেজাজ ফুরফুরে। তার ড্রয়ার টেনে সুগন্ধি তামাক
বের করে meerschaum pipe -এ ভরালেন, তারপর আগুন ধরালেন। একবার টান দিয়ে
ধমকের সুরে বললেন, “আমি বলছি, বসো!”
তারা বসল না, আগের মতো দৃঢ় মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়েই থাকল। রাসেল হঠাৎ
লক্ষ করল দারোগা বাবুর পেছনে একটি সাইনবোর্ড। Capital অক্ষরে তাতে লেখা ‘NO SMOKING’।

সে দ্রুততালে দারোগা বাবুর পেছনে গিয়ে সাইনবোর্ডটি দেয়াল থেকে
নামিয়ে এনে তার টেবিলের উপর রাখল।
দারোগা বাবুর ফুরফুরে মেজাজ বিগড়ে গেল। কর্কশ স¦রে বললেন, “আমাকে
শেখাচ্ছ? জানো আমি কে? ডিসিপ্লিন বজায় রাখার জন্য আমার বেশ সুনাম আছে। হায়ার
অথরিটি আমাকে এ সংক্রান্ত সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য হয়েছেন।”
“কোনো সন্দেহ নেই আপনার হায়ার অথরিটি ঘানি টানা গরুর মতো ঠুলি পরে
থাকেন,” রাসেল ঠেস মেরে বলল।
গরুর প্রসঙ্গ আসায় দারোগা বাবু ক্রোধে ছত্রখান। “কী বললে, তারা গরু? একেই
বলে ছোট মুখে বড় কথা! তোমরা বাঙালিরাই একেকটা গরু। সে-কারণেই মুজিবের
কথায় তোমরা লেজ নাড়ো আর হাম্বা হাম্বা করো।”
“আমরা হাম্বা হাম্বা করিনা। অপশাসন, মারি, মড়ক, মন্বন্তরের সঙ্গে লড়াই করতে
করতে আমরা এখন বাঘের জাতি।” রাসেল তার বুকের পাটা প্রসারিত করল।
“আরেব্বা, বাঘের জাতি! কোথাকার বাঘ? সুন্দরবনের না দিল্লীর? তোমার মতো
কতকগুলো বাঘ আমাদের পুলিশ বাহিনীতে দরকার।”
এবার তিনি তার পূর্বপুরুষের কোনো এক গুণের কারণে তড়িৎ শান্ত হয়ে এলেন।
রাসেলকে লক্ষ করে গম্ভীর স্বরে বললেন, “বাঘ হও আর সিংহ হও, শেষ কথা হলো
আমি যা বলি তুমি তা শোনো আর যা করি তা করো না।” পরক্ষণে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমার নাম?”
“রাসেল আহমেদ,” রাসেল উত্তর দিল।
“খারাপ না! অর্ধেক খ্রিস্টানের নাম, অর্ধেক মুসলিমের নাম। তবুও তুমি মুসলমান।
আমরা ভাই ভাই।” দ্বিতীয়বার পাইপ টানলেন, “অবশ্যই জানো আমাদের প্রিয় নবি
হজরত মুহাম্মদ বলেছেন, একজন মুসলমান অন্য মুসলমান থেকে নিরাপদ। সুতরাং তুমি
নিরাপদে আছ। তবে চে’ গুয়েভারা হওয়ার চেষ্টা করো না। আমি এই জমানার বিপ্লবীদের
ঘৃণা করি। বিপ্লব পৃথিবীতে একবারই হয়েছিল সেই জাহিলিয়া যুগে—যার নেতৃত্বে ছিলেন
আমাদের প্রিয় নবি।”
এবার তিনি সাবিত্রী’র দিকে তাকালেন তির্যক চোখে।
গরাদের ভেতর যতক্ষণ ছিল ততক্ষণ তার মেরুদণ্ডে অচেনা সংশয় শিরশির করছিল।
বেরুনোর পর দৃঢ় সাহস সংশয় তাড়িয়ে দিয়ে তার মেরুদণ্ড কব্জা করে নিয়েছে। ফলে,
তার ভেতর যেন জোয়ান অব আর্ক পুনরুজ্জীবিত হলেন। বুক চিতিয়ে বলল সে, “আমার
নাম সাবিত্রী। মাছে-ভাতে বাঙালি।”
দারোগা বাবু ঠাট্টায় মাতলেন, “দেখো, গলায় যেন কাঁটা না বিঁধে?” পরক্ষণে
বললেন, “তোমাকে বেশ সাহসী মনে হচ্ছে। ধর্ম-কর্ম করো?”
“বাবা-মারা যা করে তাই করি।”
“কী করেন?”
“পুজো।”
“তুমি মুসলমান নও! প্রতিমা উপাসক! তুমি জানো সমস্ত হিন্দু জাহান্নামে যাবে?
জানো না। যদি একবার জানতে তবে তোমার ধর্মকে ঘৃণা করতে। তোমার মাথা,
চোখ, কান, মুখ, হাত, পা কে সৃৃষ্টি করেছেন? তোমার দেবতা নাকি দেবী? না, এগুলো
মাটি এবং খড় দ্বারা তৈরি। এগুলো নির্জীব, কিছু তৈরি করার ক্ষমতা তাদের নেই।
আল্লাহতা’আলা আমাদের অনেক যত্ন করে সৃৃষ্টি করেছেন। তিনি সর্বশক্তিমান ও অনন্য।
হযরত মুহাম্মদ তাঁর একমাত্র প্রেরিত নবি।”
“অবশ্যই জানেন, আল্লাহতা’আলা বলেছেন ‘ধর্মে কোনো জোরজবরদস্তি নেই’।
তার কথা ঠিক?” রাসেল বলল তার দিকে তাকিয়ে।
“এটা ঠিক,” তিনি স্বর নিচু করলেন, “এখন বলো তোমাদের দু’জনের সম্পর্ক কী?”
রাসেল হঠাৎ হেঁচকা টান দিয়ে সাবিত্রীকে কাছে নিল, আর তাতেই তাদের সম্পর্কটা
বুঝে গেলেন তিনি।
এই জাতীয় ঘটনা তার ধারণার বাইরে ছিল, বিব্রত হলেন। তিনি তার চেয়ারে
সোজা হয়ে ছিলেন, এবার হেলান দিয়ে বললেন, “তোমাদের রসায়ন বুঝে গেছি! মিয়া
বিবি রাজি কিয়া করে গা কাজি।”
রাসেল তাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়াল।
দারোগা বাবু এবার বললেন, “মনে করি তোমরা তরুণ দম্পতি। তবে কষ্ট পাচ্ছি
তার নাম নিয়ে। আমরা যারা মুসলমান, কোনো হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তরিত না করে বিয়ে
করতে পারিনা। ধর্মান্তরিত না করে ইহুদি ও খ্রিস্টান মহিলাদের বিবাহ করা জায়েজ
আছে। কারণ, তাদের স্বীকৃত নবি আমাদের নবিও বটে এবং তারা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস
করেন। পরামর্শ দিচ্ছি, তার নাম ফাতেমা আহমেদ রাখতে পারো। ফাতেমা হলেন
আমাদের নবির কন্যার নাম, পবিত্র নাম। যদি না করো ধরে নেব তুমি মানসিকভাবে
সংকটপূর্ণ মানুষ।”
“প্লিজ, ভাষা সংযত করুন! এটি আমার ব্যক্তিগত বিষয়!” রাসেল তাকে সতর্ক
করল।
তিনি যে ক্ষুব্ধ হলেন তার প্রমাণ মিলল তার প্রশ্ন করার ধরনে। হঠাৎ প্রশ্ন করলেন,
“তোমরা তো জানো দেশে অস্থিরতা চলছে, তাহলে কেন মিটিংয়ে গিয়েছিলে?”
“আপনার প্রেসিডেন্ট মি. ইয়াহিয়া আমাদের সেখানে যেতে বাধ্য করেছেন!” রাসেল
গলা চড়াল।
রাগে-ক্ষোভে মাটিতে বুট ঘষলেন তিনি। কর্কশ কণ্ঠে বললেন, “এটি এ বছরের
সেরা তামাশা! Scoundrel! তুমি তার সম্পর্কে কী জানো?”
ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতো মনোবল রাসেলের নয়। সটান দাঁড়িয়ে, তার মুখের
উপর সপাটে বলল সে, “আমি সোজাসুজি একজন scoundrel, কিন্তু আপনাদের প্রিয়
নেতা গিলগামাসের মতো অত্যাচারী, স্বেচ্ছাচারী এবং ধর্ষক। অ্যাবাভ অল একজন দুর্দান্ত
ডিক্টেটর!” তারপর সাহসের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, “ডাউন উইথ ডিক্টেটর!”
“মুখ সামলে কথা বল! ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড! তোকে খুন করা উচিত! আই ডোন্ট নো
হু ইজ গিলগামাস?” ভীষণ অপমানিত বোধ করলেন তিনি। উচ্চস্বরে বললেন, “মাননীয়
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমাদের মহান নেতা! পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে সফলভাবে
নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। আমি তাকে ম্যাগনিফায়িং করছি না। নো ডাউট তিনি এশিয়ার
একজন শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট। তাকে শ্রদ্ধা করতে ভার্সিটিতে পড়ার দরকার নেই। তিনি
আমাদের কাণ্ডারি। ইসলামি কারাভানের অগ্রযাত্রী।” অবজ্ঞার সুরে এবার বললেন, “তোর
মতো ভার্সিটি পড়ুয়া বাঙালিরা ভারতের দালাল এবং খাঁটি বান্দর! তোরা সবাই জাহান্নামে
যা!”
রাসেল প্রথম দ্বিধায় ছিল কী বলবে, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে, পুরুষোচিতভাবে
বলল, “আমরা ভারতের দালাল এবং বান্দর নই। গণমানুষের রুদ্ধ ও অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা
পদদলিত করে রাষ্ট্র চালাতে চাইছেন আপনারা! আমরা এর বিরুদ্ধে। বলতে পারেন
আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাচ্চা সৈনিক।”
“মুজিবের নাম মুখে আনবি না, বান্দর! সে ভারতের কুখ্যাত সহযোগী এবং
মুসলমানদের শত্রু,” বললেন তিনি, দাঁত চিবিয়ে।
পুলিশ সদস্য ফিরে এসে বলল, “স্যার, আপনার মিসেস ডেকেছেন।’’
মিসেসকে খুব ভয় পান তিনি। ক্ষোভ চাপা রেখে অগত্যা চেয়ার ছাড়লেন। তার
আগে তাদের মুক্ত করে দিয়ে বললেন, “তোমাদের কোর্টে চালান করতে পারতাম।
করলাম না তোমরা প্রেমিক-প্রেমিকা বলে। এখন যেতে পারো।”
তারা থানা থেকে বেরিয়ে এসে ধন্বন্তরি বাতাসে অবাধে শ্বাস নিল। বিধ্বস্ত ও মলিন
ভাব রক্তের খোঁয়াড় থেকে দড়ি ছিঁড়ে পালিয়ে গেল। সামান্য স্বস্তির আচকান চাপিয়ে তারা
হাঁটতে শুরু করল।
রাতের আলো-ছায়ার অন্যোন্যক্রিয়া সর্বত্র বিরাজিত ছিল। কর্মচঞ্চল রাস্তায় খুব
কম যাত্রী এবং যানবাহন চলছিল। জনগণের শহর পরিণত হয়েছিল যেন পুলিশি শহরে।
বাতাসের গতিবেগ যেন থেমে গিয়েছিল এবং বৃক্ষরা অক্সিজেন জোগানো থেকে বিরত
ছিল। তাদের কাছে তাদের চিরচেনা রাস্তাগুলো মনে হচ্ছিল অজানা এবং সন্দেহজনক।
তারা অনুভব করছিল রহস্যময়তার অস্বাভাবিক অনুভূতি এবং খিদের জ্বালায় তারা মরে
যাচ্ছিল প্রায় মৃত শহরের মতো। যদিও, ওই দূরে ডুকরে কাঁদছিল চিন্তাশীল চাঁদ। তার
অশ্রুপ্লাবনে ভেসে যাচ্ছিল তারকাশোভিত আকাশ, বৃক্ষদের আবাসস্থল, জলদুহিতাদের
স্নানাগার ও কংক্রিট শহর।
থানার বাইরে এসে স্বস্তিতে থাকলেও তারা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। খিদে তাদের
কোমরে দড়ি বেঁধে হোটেলের দিকে টানছিল। তারা সেখানে ঢুকে ক্ষুন্নিবৃত্তি সারল।
শরীরে বল ফিরে পেলে এবং সুস্থবোধ করলে খাজুরে আলাপ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ঢাকা
শহরের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইল হোটেল ম্যানেজারের কাছে। হোটেল
ম্যানেজার আগে থেকেই তাদের পরিচিত ছিলেন। তিনি তাদের সুসংবাদের কোনো  snippet দিতে পারলেন না।
তারা পুনরায় রাস্তায় নামল।
সাবিত্রী অপ্রত্যাশিতভাবে একটু আগের বিষয় টেনে আনল। সে তার কনুই দিয়ে
রাসেলকে মৃদু ধাক্কা দিল এবং বকবক করে উঠল, “আমি খুব বেশি বিস্মিত হয়েছিলাম!
কীভাবে এটা সম্ভব? ইঙ্গিত না দিয়ে তুমি আমাকে হেঁচকা টান দিলে! কাজটা কি ঠিক
ছিল? তা-ও একজন দারোগার সামনে! নৈতিকতার ধার ধারলে না। খুব খারাপ! আমি
তোমার প্রেমিকা বা স্ত্রী নই। আমি শুধু তোমার ভালো বন্ধু। তোমার কি মনে হয় আমি
একজন nymphet? “তোমার বকবকানি বন্ধ করো! ইচ্ছে করছে তোমাকে থাপ্পড় দেই!” রাসেল বেজায়
ক্ষুব্ধ হলো এবং চেঁচিয়ে উঠল, “একটা টানই তো দিয়েছি, তোমার গালে চুমু তো
খাইনি।”
সাবিত্রী তার উত্তরে খুশি হলো না। “অসভ্য! ভাবা উচিত ছিল আমি একজন হিন্দু
মেয়ে।”
রাসেল হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল। “তুমি যদি ভাবো তুমি হিন্দু মেয়ে, তবে আমার
কাছে কেন আসো? এখন থেকে আমার কাছে আর আসবে না! আমি খুব বাজে মানুষ!
প্লিজ গো আউট অফ হিয়ার!”
“ওকে, আই অ্যাম গোয়িং! এখন থেকে তোমার কাছে আসব না। তুমি যে দুরপনেয়
কাজ করেছ,” বলল সে, গোমড়া মুখে।
“বেশ! আমার কাছে এসো না,” রাসেল বলল, চাপা ক্রোধে। কী মনে করে সে
আবার বাড়তি কথা বলল, “আমি কারো ছিঁচকাঁদুনে সেন্টিমেন্টের ধার ধারি না। তুমি
ভালো ব্যবহার জানো না।”
“তুমি ভালো ব্যবহার জানো না” এই দোষারোপ সাবিত্রীকে মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ
করল। রাসেলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং তখুনি কথা বলা বন্ধ করল। লোকে
বলে, সুসম্পর্কের পাহাড় ডিঙানো যতটা সহজ, খারাপ সম্পর্কের ছায়া ডিঙানো ততটা
কঠিন। পরিস্থিতি এমন হলো কেউ কারো মুখের দিকেও তাকাচ্ছিল না। বিরূপ হতাশা
তাদের গ্রাস করল এবং বাজে তিক্ততা তাদের ফালাফালা করল। ফলে দু’জনের মধ্যে
অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনিবার্য দূরত্ব তৈরি হলো।
মুখ কালো করে সাবিত্রী যখন একা চলে যাচ্ছিল, রাসেল সব ভুলে গিয়ে পেছন
থেকে তার নাম ধরে ডাকল; কিন্তু সে তার কথায় কান না দিয়ে চলে যেতে থাকল ঢোলা
ট্রাউজার পরা মজনু-বাতাস দাবড়িয়ে এবং তার নিতম্ব দুলিয়ে।
অবশেষে, অভিমানের দেয়াল এতটাই উঁচু হয়ে দাঁড়াল সাবিত্রী কয়েক দিনের জন্য
রাসেলের সঙ্গে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখল। (চলবে)

আরো পড়ুন