ডেথ অব এ সার্জন

ডা. মো. হাফিজুর রহমান ইবনে কুদ্দুস

by sondeshbd.com
67 views

দুনিয়ার জান্নাত মার্কিন মুলূক। এই জান্নাতি মুলূকের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি। আমেরিকার পূর্ব উপকূল ঘেষে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে স্ট্যাচু অব লিবার্টি Statue of Liberty বক্ষে ধারণ করে দাড়িয়ে আছে মানবতাকে মুক্তির করানোর জন্য— “ গেটওয়ে টু আমেরিকা” প্রতি মিনিটে বা তারও কম সময়ে একটি করে বিমান উঠছে-নামছে এই নিউইয়র্ক সিটিরই বৃহত্তম এয়ারপোর্ট জন এফ কেনেডী থেকে।

দুনিয়াদারীদের কাছে এহেন জান্নাতি সিটির বাসিন্দা ডা. জন এফ ম্যাকবেথ। প্রখ্যাত বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন। ভদ্রলোক যেন জান্নাতেরই বাসিন্দা কি নেই তার। আমেরিকার এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ বিত্ত, বৈভব, যশ-খ্যাতি, অর্থ, বাড়ি-গাড়ি আধুনিক ভোগবাদী জীবনের সব উপকরণের জীবন কানায় কানায় পূর্ণ Adjectives exhausted to adjectifz him.গত তিন দশক ধরে চুটিয়ে প্র্যাকটিস করছেন ডাক্তার সাহেব। প্রচুর রোগী, প্রায় কমবেশি একই রকমের উপসর্গ কাশি, খাওয়ার অরুচি, কাশির সাথে রক্ত, শরীর ভেঙে পড়েছে, ওজন কমে যাচ্ছে ইত্যাদি।
চেম্বারে ডাক্তার হিস্ট্রি নেন
ধূমপান করেন?
জ্বী করি।
কয়টা?
আগে অনেক করতাম— দিনে গড়ে ২০-৩০টা, এখন কাশি শুরুর পর থেকে কমিয়ে দিয়েছি।

আরো আনুষঙ্গিক দু-একটি প্রশ্ন করেন। খচ্ খচ্ করে প্রেসক্রিপশন লিখেন— প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেন। রক্ত, বুকের এক্স-রে, ব্রংকোসকপি ইত্যাদি। রোগী রিপোর্ট নিয়ে আবার হাজির হন চেম্বারে। রিপোর্ট দেখে ভ্রু-কুচকান ডাক্তার সাহেব। ডাক্তারের চেহারায় প্রতিবিম্বিত হয় রিপোর্টের মরনব্যাধি ক্যান্সারের মরন কামড়ের চিত্র। সেখান থেকে সে চিত্র যায় রোগী ও তার আত্মীয়ের চেহারায়।
ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট কি খারাপ?
ডাক্তার কৌশলে রোগীকে চেম্বারের বাহিরে যেতে বলেন।
পরে রোগীর অভিভাবককে জানান ডায়াগনোসিসের কথা। ফুসফুসে ক্যান্সারের কথা। এও জানান যে, এটা ধূমপান জনিত ক্যান্সার। কিন্তু ডাক্তার সাহেব, ধূমপান তো কাশি শুরুর পর থেকেই টোটালি ছেড়ে দিয়েছি, তারপরও ধূমপানের কারণে ক্যান্সার! দেখুন। ডাক্তার সাহেব বললেন বাসার ভিতরে খোলা দরজা দিয়ে চোর ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ রাখলে কি চুরি থেকে বাচা যাবে?

 

মরণব্যাধি শরীরে বাসা বাধার পর ধূমপান ছাড়লে কি হবে। কি লাভ তাতে? বুক ভরা এক রাশ হতাশা নিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফিরে যান বাসায়। নিয়মিত ফলোআপে আসতে থাকেন রোগী। কখনো কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি/ অপারেশন, কম্বাইনড চিকিৎসা চলতে থাকে রোগের অবস্থা অনুযায়ী। তারপরে একদিন অকালে ঝরে পড়ে প্রাণ-৬ মাস, ৯ মাস বা ১ বছরের মাথায়। আল্লাহর সৃষ্ট উত্তম অবয়বের দেহটি পাড়ি জমায় পরপারে। পেছনে রেখে যায় স্ত্রীর জন্য অকাল বৈধব্যের, সন্তান-সন্ততির জন্য পিতা হারানোর এবং অনরূপ আরো অনেক আপনজন হারানোর নিদারুন ব্যাথা ও শোক। কিন্তু কেমন এমন হয়। আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত একটি নিখুত পূর্ণাঙ্গ দেহের একটি মানুষের এই অকাল পরিণতি কেন? একি ধূমপানের এ ধুম্রকুন্ডলীর মাঝে যা জীবনী শক্তিকে তিলে তিলে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়— জীবনের স্বার্থকতা খোজা। একি জীবনের যাতনায় মৃত্যুই মাধুরী বা মরণের বীথিকায় জীবনের উচ্ছাস খোজা।
না। কোনোটাই না।

আসলে মানুষের তার স্রষ্টা, সৃষ্টির উদ্দেশ্য,জীবন-মৃত্যুর দর্শন ও জীবনযাপনের বিধানাবলী সম্পর্কে বে-খেয়াল থাকা, গড্ডালিকা প্রবাহে জীবনকে ভাসিয়ে দেয়ার ফসলই হলো এ করুন পরিণতি।

মানুষের জীবন চিরকাল এক থাকে না— জীবন সূর্যেরও উদয়-অস্ত আচে। ডা. জন এফ ম্যাকবেথের জীবনেও ঘটল তাই।
গত কিছু দিন থেকে শরীরটা বেশ দুর্বল মনে হচ্ছিল। খাওয়ার রুচিটা কমে যাচ্ছিল। এক দিন ওজন দিয়ে দেখলেন শরীরের ওজনও কমে গেছে কিছুটা। একটু চিন্তিত হলেন। কিন্তু পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেকোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময়-সুযোগ পাননি ডাক্তার সাহেব।

এবার খুসখুসে কাশিও যোগ হলো উপসর্গতে। এবার দুশ্চিন্তার কালো মেঘ দেখা দিল চোখে-মুখে। তার কয়েক দিন পরেই কাশির সাথে রক্ত। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। নিশ্চিতভাবেই ধরা পড়ল ফুসফুসের ক্যান্সার। Cancer of Smoking Origin.বাঘা-বাঘা সকল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হলো।
বলা হয়নি। ডাক্তার ম্যাকবেথ নিজেই ছিলেন চেইন স্মোকার। রোগীদের যখন ধূমপানের বিষময় পরিণতির ব্যাপারে নসিহত করতেন রোগীরা তখন ভাবত— ডাক্তার সাহেব ধূমপানের ব্যাপারে এত কথা বলেন কিন্তু নিজেই ধূমপান করেন কেন? সাহস করে কিন্তু তাকে প্রশ্ন করেনি কেউ।

 

It was the Irony of fate-what he prescribed to his hundreds and thousands of patitents, he never applied it to his life- Tell, No Tobacco কথা ও কাজের এই বৈপরীত্য আল-কুরআনের কথারই স্মরণ করিয়ে দেয়— “হে মুমিনগণ, তোমরা যাহা করনা তাহা তোমরা কেন বল? তোমরা যাহা করো না তোমাদের তো বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক।” সুরা : আস-সাফ্, আয়াত ২-৩

ডা. ম্যাকবেথও এ ভুলটা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু অনেক দেরীতে। ততদিনে যা হবার তা হয়ে গেছে। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলল। কিন্তু কোনো ফল হলো না। ৬ মাসের মাথায় তাকেও পাড়ি জমাতে হলো পরপারে। He had to swallow the bitter pill of his negligence to smoking at the cost of his life. জীবন সায়াহ্নে দাড়িয়ে তাই তিনি খেদোক্তি করলেন— “আমি মারা যাচ্ছি আমার কোনো দুঃখ নেই— কেননা জীবনের সব চাওয়াই পেয়েছি। শুধু একটা দুঃখই রইল আমার দীর্ঘ পেশা জীবনে হাজার হাজার রোগীকে ধূমপান না করার যে পরামর্শ দিয়েছি আমার জীবনে তা পালন করিনি।” এমনিভাবে ধূমপানের তীব্র দহনে নিজের অমূল্য জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করেছিলেন ডা. জন ম্যাকবেথ— নিউইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত চেস্ট সার্জন। বঞ্চিত করেছিলেন মানবজাতিকে তার অমূল্য চিকিৎসা সেবা থেকে। YOU CAN HAVE YOUR LEG OR YOU CAN YOUR CIGARETTE. BUT YOU CANÕT HAVE BOTH. Bailey and love’s surgery 22nd Edition

The Reader’s Digest-এর অবলম্বনে

আরো পড়ুন