স্টোরি অফ ব্রথেলজিক পর্ব – ৬

সরদার মেহেদী হাসান

by sondeshbd.com
1.3K views

তার শরীর তার ব্যবসা, ভবন,
সেই দরজা যেখানে অনেক পুরুষ প্রবেশ করেছে,
কিন্তু কেউই বের হয়নি,
তার প্রবেশ পথের দাম অনেক,
প্রবেশের আগে টাকা দেওয়ার চিহ্ন আছে,
লিফটের মতো তার ভেতরে উঠে যাও,
সে আনন্দকে ছাড়িয়ে গেছে,
এখন এটা সম্পূর্ণ ব্যবসা,
কিন্তু মাঝে মাঝে সে আনন্দের সাথে ব্যবসা মিশিয়ে দেয়,
তার সংকোচনশীল শরীরের অংশের সাথে যোগাযোগের জন্য
ঘন্টার পর ঘন্টা চুক্তি করে,
যৌন নির্যাতনে শিকার শিশু এবং দারিদ্র সেই ব্যবস্থাগুলোকে আঘাত করেছে,
অভিশাপ দিয়েছে,
দার কর্সারকে নির্দোষ থেকে বেশ্যায় রূপান্তরিত করেছে।
(কবিতাটি লিখেছেন মাইকেল মেগো)

কবিতা নান্দনিকতার সাথে, অথবা পৃথিবীর যেকোন সুন্দর জিনিসের সাথে সম্পর্কিত। এটি সাংস্কৃতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে। কবিতা সংস্কৃতির ইতিহাস ও মুল্যবোধ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দেয়।

একজন লেখক বা কবি তার লেখায় একজন পতিতার চরিত্র ব্যবহার করে দারিদ্র, শোষন, আকাঙ্খা, সামাজিক বিচার এবং মানব পকৃতির দ্বৈততার মতো জটিল বিষয়গুলোকে অন্বেষণ করতে অথবা শিল্পের আপোষের রূপক হিসেবে কাজ করতে।

আমরা কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখি। গল্পের মধ্যে, স্বার্থের উপর ভিত্তি করে চরিত্র তৈরি করি, গল্প সাজাই, নিজ ঘরের নারীদের “মা” এর অবস্থানে রেখে নিষিদ্ধজগতের নারীদের পতিতা নামে গল্পের উপসংহার টানি।

বাস্তবতায় আমরা পতিতাদের যতই ঘৃণা করি না কেন, মনের অপর প্রান্তের ধবধবে সাদা কাঁপড়ে আচ্ছাদিত রাজার আসীনে বসে, আমরা দাস দাসত্বের প্রথাকে পূনর্জ্জীবিত করে, নিজেদের গোপন যৌবিক চাহিদাকে মেটানোর ফন্দি খুজি।

আমরা পৃথিবীর এক ঘৃর্ণীত, অন্ধকারাচ্ছন্ন পেশাকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাই বারান্দার টবে রাখা সৌখিন লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা গাছটির মতো বাঁচিয়ে রাখি।

আমাদের জ্ঞান ও শিক্ষায় ব্রথেল লজিক কে কালের ধারাবাহিকতায় নতুন ভাবে, নতুন আঙ্গিকে, নতুন পরিসরে উপস্থাপন করি। আর এ কারনেই সমগ্র পৃথিবীর সামাজিক, সোশ্যাল মাধ্যমগুলো হয়ে উঠছে ব্রথেলজিকের সুবিশাল চারণক্ষেত্র হিসেবে।

আমি বহুদিন ধরেই নিষিদ্ধপলীতে আসা-যাওয়া করছি ডকুমেন্টরি, ডকুড্রামা ও নাটক তৈরির কাজে। আমার বন্ধুবর রুমি ভাইকে নিয়ে একদিন টাঙ্গাইল পল্লীতে দেখা করতে গেলাম মেরীর নানীর সঙ্গে। মেরীর নানী পল্লীর এক বাড়িওলীর, একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
মেরী অনাকাঙ্খিত ভাবে নিষিদ্ধপল্লীতে জন্মগ্রহণকৃত একজন শিশু। তাকে জন্ম দেবার সময়ই তার মা মৃত্যুবরণ করেন। মেরীর মা ও নানী ছিল একজন যৌনকর্মী। মেরীর মা মারা যাবার পর মেরীর নানী পল্লীতে থেকে, তাকে টাঙ্গাইলের এসএসএস এনজিওর তত্বাবধায়নে পরিচালিত সোনার বাংলা চিলড্রেনস হোমে রেখে, পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলে আমাদের সভ্য সমাজের মুক্ত বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছেন। মেরী আজ প্রতিষ্ঠিত গৃহিণী।

আমরা আজ মেরীর নানীর ঘরে গেলাম। উনি আগে থেকেই আমার নাম জানতেন কারণ মেরী তার নানীকে আমার বিষয়ে বলে রেখেছে। নানী আমাদেরকে বিছানায় বসতে বললেন, আমি ও রুমি ভাই ছোট্ট পরিপাটি ঘরের বিছানায় গিয়ে বসলাম। মেরীর নানী আমাদেরকে মেরীর বাবা/মা’র ছবি দেখালেন, কাঁদলেন, বললেন অনেক অজানা কাহিনী।
নানী কত বছর ধরে এখানে আছেন?
ত্রিশ/চল্লিশ বছর হবে।
আপনার ছেলে/ মেয়ে কয়জন?
একটাই মেয়ে ছিল, মেরী’র মা
এখন…তো আপনার বয়স হয়েছে, চলছেন কিভাবে?
আল্লাহ’ই য্যামনে চলাই
তা বুঝলাম, আপনাকে খরচ দেয় কে?
বাবা’রে… বয়স হইছে, খদ্দের…তো আগের মতো আসে না…
তাহলে চলেন কিভাবে?
ঐ…দু/একজন যা দেয়।
আচ্ছা…তাহলে, দু/একজন খদ্দের এখনও আসে।
আরে…না, তারা খদ্দের নয়, বাবু
আচ্ছা, এখনও বাবু আছে?
তুই কি তোর বউ বুড়া হলে বাড়ি থেকে বের করে দিবি?
তা কি করে হয়, নানী। বউকে কি বের করে দেওয়া যায়!
তাহলে? বুচ্ছ এবার?
আমি হাঁ সূচক জবাব দিয়ে নানীকে বললাম: তাদের সঙ্গে আপনার ভালবাসার সম্পর্ক আছে?
না থাকলে কি তারা এখনও আসে!
তা অবশ্য ঠিক, তারাই কি সব খরচ দেই?
তারা দেয়, আমি নিজেও কিছু কাপড় সেলাই করি, তা দিয়েই কোন মতে জীবন চলে।
আমি মাঝে মধ্যে ভাবি, এখানে আমি কেন আসছি? ভুলে যাই, ভুলে যেতে বাধ্য হই। আবার মনে করে আবার লিখব। (চলবে)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরো পড়ুন