মহান বিজয় দিবসের গভীরতম শুভেচ্ছা। একাত্তরের সেই যুদ্ধজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতার সনদ অর্জন করেছিলাম, তার মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি সার্বভৌম, আত্মমর্যাদাশীল এবং শৃঙ্খলমুক্ত জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা লক্ষ্য করেছি, আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ এবং ভিনদেশী প্রভাব সেই ‘প্রকৃত মুক্তি’র পথে বারবার দেওয়াল তুলেছে। এই আধিপত্যবাদী মানসিকতা, তা সে আমাদের উপর চাপানো আঞ্চলিক খবরদারীই হোক, বা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে জায়নবাদী দখলদারিত্বই হোক—এর চরিত্র fundamentally এক: অন্যের অধিকার হরণ এবং মানবতাকে পদদলিত করা। আমাদের সংগ্রাম তাই শুধু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং সকল ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি নিরন্তর প্রতিরোধ।
বাংলাদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা কোনো প্রতারণা বা জালের মধ্যে আটকে থাকার জাতি নয়। আমরা যতবার প্রতারিত হয়েছি, ততবারই সম্মিলিত শক্তিতে সেই জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছি। চব্বিশের বর্ষা বিপ্লব বা জুলাই অভ্যুত্থান তারই সাম্প্রতিকতম ও জ্বলন্ত উদাহরণ। এই অভ্যুত্থান প্রমাণ করে, একাত্তরের সেই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমাদের রক্তে চিরন্তন। যখনই জাতি দেখেছে যে বিজয়ের অর্জন হাতছাড়া হচ্ছে বা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, তখনই বাংলার দামাল জনতা গর্জে উঠেছে। তাই এই বিজয় উল্লাস, সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই প্রকৃত মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে আরও একবার জোরালো করল।
তবে এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাই: আমাদের বিরোধিতা কোনো নির্দিষ্ট দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নয়। কাঁটাতারের অপর পারে থাকা ভারতবাসী আমাদের শত্রু নয়; বরং তারাও উগ্র রাজনৈতিক এজেন্ডা ও বৈষম্যের শিকার। তাদেরও আত্মমর্যাদার সাথে বাঁচার ও বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অধিকার রয়েছে, যা সেখানেও আজ সংকুচিত। আমাদের অঙ্গীকার হলো—সকল আধিপত্যের পতন। এই বিজয়ের মাসে আমাদের শপথ হোক: কোনো পরাশক্তির তাঁবেদারি নয়, আমরা নিজেদের সার্বভৌমত্বের চূড়ান্ত গ্যারান্টি নিজেরাই দেব। চির জাগ্রত হোক জনগণের শক্তি, অর্জিত হোক ‘প্রকৃত মুক্তি’।
মোঃ মেহেদী হাসান রকি: কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, রাজনীতি ও সমাজ চিন্তক এবং সাহিত্য সমালোচক

